SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or

Log in with Google Account

ষষ্ঠ শ্রেণি (মাধ্যমিক) - ইসলাম শিক্ষা - ইবাদাত | NCTB BOOK

তায়াম্মুম অর্থ ইচ্ছা করা।  ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায় তায়াম্মুম বলতে পবিত্র মাটি বা মাটি জাতীয় পৰিত্ৰ বন্ধু(যেমন: পাথর, চুনাপাথর, বালি ইত্যাদি) দ্বারা পবিত্র হওয়ার নিয়তে মুখমণ্ডল ও উভয় হাত কনুইসহ মাসাহ করাকে বোঝায়। ওযু ও গোসল উভয়ের পরিবর্তে তায়াম্মুম করা যায়। পবিত্রতা অর্জনের প্রকৃত মাধ্যম হলো পানি। তবে পানি পাওয়া না গেলে অথবা পাওয়া গেলেও পানি ব্যবহারে রোগবৃদ্ধি বা প্রাণনাশের আশঙ্কা থাকলে এমন অবস্থায় আল্লাহ তা'আলা মাটি দিয়ে পবিত্রতা অর্জনের অনুমতি দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা'আলা বলেন, “আর তোমরা যদি পানি না পাও, তবে পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করবে এবং তোমরা তোমাদের মুখমণ্ডল ও হাত মাসাহ করবে।' (সুরা আল-মায়িদা, আয়াত: ৬)

 

তায়াম্মুম করার নিয়ম

প্রথমে তায়াম্মুমের নিয়ত করে 'বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম' পড়বে। তারপর দুই হাতের তালু একটু প্রসারিত করে পবিত্র মাটি বা মাটি জাতীয় পবিত্র বস্তু, যেমন: পাথর, চুনাপাথর, বালি ইত্যাদিতে দুই হাত লাগিয়ে সমস্ত মুখমণ্ডল একবার মাসাহ করবে। পুনরায় দুই হাত মাটিতে লাগিয়ে উভয় হাত কনুইসহ মাসেহ করবে। হাতে ঘড়ি বা অন্য কোনো জিনিস থাকলে তা সরিয়ে তার নিচেও মাসেহ করতে হবে।

 

তায়াম্মুমের ফরয

তায়াম্মুমের ফরয তিনটি। যথা-

১. পবিত্রতা অর্জনের নিয়ত করা;

২. পৰিত্ৰ মাটি দিয়ে পুরো মুখমণ্ডল মাসাহ করা ;

৩. পবিত্র মাটি দিয়ে উভয় হাত কনুইসহ মাসাহ করা।

 

তায়াম্মুম ভঙ্গের কারণ

যেসব কারণে তায়াম্মুম ভঙ্গ হয় তা নিম্নরূপ:

  •  যেসব কারণে ওযু ভেঙে যায়, সেসব কারণে তায়াম্মুমও ভেঙে যায়।
  • যেসব কারণে গোসল ওয়াজিব হয়, সেসব কারণে তায়াম্মুম ভঙ্গ হয়ে যায়।
  • পানির অভাবে তায়াম্মুম করার পর পানি পাওয়া গেলে।
  • যেসব কারণে তায়াম্মুম করা জায়েয (বৈধ) ছিল, সেসব কারণ দূর হয়ে গেলে। যেমন: কোনো রোগের কারণে তায়াম্মুম করা হলে, সেই রোগ সেরে গেলে সঙ্গে সঙ্গে তায়াম্মুম ভেঙে যায়।

 

অনুশীলন:

শিক্ষকের সহায়তায় তায়াম্মুম করার পদ্ধতি অনুশীলন করো।

 

শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় পবিত্রতার ভূমিকা

আমরা সবাই ভালো থাকতে চাই। ভালো থাকতে হলে শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে হবে। দুশ্চিন্তা ও মানসিক চাপ থাকলে মনে সুখ-শান্তি থাকে না; ফলে নানারকম শারীরিক ও মানসিক রোগ সৃষ্টি হয়। এই শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় পবিত্রতার ভূমিকা অপরিসীম। ইসলাম পবিত্রতার উপর অত্যন্ত গুরুত্বারোপ করে। ইসলাম শারীরিক পবিত্রতার সাথে সাথে মানুষের আত্মিক পবিত্রতা, বিশ্বাসের পবিত্রতা, কর্মের পবিত্রতা, আর্থিক পবিত্রতা, পরিবেশের পবিত্রতা ইত্যাদির প্রতি গুরুত্বারোপ করে। পবিত্রতা শরীরকে রাখে সতেজ ও সবল, মনকে রাখে প্রফুল্ল। ফলে সেই শরীর ও মন থাকে রোগ-জীবাণু থেকে সুরক্ষিত।

অপবিত্রতা থেকে নানারকম রোগ-ব্যাধি সৃষ্টি হয়। পোশাক-পরিচ্ছদ নোংরা থাকলে রোগ-জীবাণু ছড়ায়। পোশাক-পরিচ্ছদ পবিত্র রাখার ব্যাপারে আল্লাহ তা'আলা বলেন, 'তোমার পোশাক-পরিচ্ছদ পবিত্র রাখো। (যাবতীয়) অপবিত্রতা থেকে দূরে থাকো।' (সুরা আল-মুদ্দাছছির, আয়াত: B-)

বর্তমানে ১৫ অক্টোবর আন্তর্জাতিকভাবে 'বিশ্ব হাতধোয়া দিবস' পালিত হয়। সারা বিশ্বে কোভিড-১৯ সংক্রমিত হওয়ার পর দেশের প্রায় সব বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের হাত ধোয়ার পদ্ধতি শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। ইসলামে পবিত্রতা অর্জনের জন্য ওযু, গোসল ও তায়াম্মুমের বিধান রয়েছে। দৈনিক পাঁচবার সালাত আদায়ের জন্য ওযু করতে হয়। ওযু করলে শরীর থেকে যেমন রোগ- জীবাণু ধুয়ে যায়, তেমনি গুনাহসমূহও বের হয়ে যায়। এর মাধ্যমে শারীরিক ও মানসিক পবিত্রতা অর্জিত হয়।

মানব শরীরে মুখগহ্বর স্পর্শকাতর একটি স্থান। আমরা সারা দিন নানা রকম খাবার গ্রহণ করি। আমরা যদি সব সময় মুখ পরিষ্কার না রাখি তাহলে নানারকম রোগের পাশাপাশি ক্যানসার পর্যন্ত হতে পারে। তাই মহানবি (সা.) নিয়মিত মিসওয়াক করার ব্যাপারে গুরুত্ব দিয়েছেন।

শরীরিক পবিত্রতার সঙ্গে মানসিক শান্তি একই সূত্রে গাঁথা। আমরা শারীরিকভাবে পবিত্র থাকলে আত্মিক প্রশান্তি পাবো। মন থাকবে প্রফুল্ল ও সতেজ। সুতরাং শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় পবিত্রতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই আমাদের সব সময় পবিত্র থাকার এবং আমাদের আশপাশের পরিবেশকে পবিত্র রাখার চেষ্টা করা উচিত।

তাহলে এতক্ষণ আমরা পবিত্র থাকার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা এবং এর বিভিন্ন উপায় সম্পর্কে জানলাম। 

অনুশীলন:

বন্ধুরা মিলে দলগতভাবে পবিত্র থাকার সুফলসমূহ আলোচনা করো।

এবার এসো আল্লাহর ইবাদাতের অন্যতম মাধ্যম সালাত বা নামায সম্পর্কে জেনে নিই।

Content added By

Promotion